কোটা আন্দোলন সারা দেশে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ নিহত ১৯
18 JULY 2024
ইত্তেফাক ডিজিটাল ডেস্ক | প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৪, ২০:২৮
রাজধানীসহ সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের-যুবলীগের সংঘর্ষে ১১ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দেশজুড়ে চলা সংঘর্ষে এ প্রাণহানি ঘটে।
দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, আজ রাজধানীর উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে প্রথমে দুজন নিহতের খবর পাওয়া যায়। তাদের একজন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান এবং আরেকজন উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান। দুই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পরে আরও চারজনের মৃত্যুর খবর আসে। উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেছেন, চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। বাকি দুজনের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত আরও চারজনের মরদেহ এসেছে। মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, একজনের নাম মোহাম্মদ। তাকে আজিমপুর থেকে আনা হয়েছে। অন্যজনের নাম নাজমুল। তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আনা হয়েছে। মোহাম্মদের শরীরে ছররা গুলির ক্ষত দেখা গেছে। নাজমুলের শরীরে রয়েছে কোপের আঘাত। বাকি দুজনের মধ্যে একজন ঢাকা টাইমসে কর্মরত সাংবাদিক হাসান মেহেদী বলে জানা গেছে। সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে তাকে আনা হয়েছে । তার শরীরে ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে। আর অপরজনের নাম ওয়াসিম। তাকে আনা হয় যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত এলাকা থেকে।
রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় ড্রাইভার। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বনশ্রীর ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন গণমাধ্যমকে নিহতের পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য জানিয়েছেন।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এক রিকশাচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক ব্যক্তি। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিকশাচালকের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী ফারহান নিহত হয়েছেন। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি।
ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত ইয়ামিন ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টেকনোলজির ছাত্র বলে জানা গেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার নাম ইয়ামিন। তিনি ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। এর বেশি তথ্য নেই। নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। আহত আরও পাঁচ জনকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মাদারীপুর
এদিকে মাদারীপুর প্রতিনিধি ও টেকেরহাট সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শকুনী লেকের পানিতে পড়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম।
নিহত শিক্ষার্থী মাদারীপুর পৌর শহরের আমিরাবাদ এলাকার স্বপন দের ছেলে দীপ্ত দে। তিনি মাদারীপুর সরকারী কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া এ ঘটনায় বিচ্ছিন্নভাবে ৮ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ।
নরসিংদী
নরসিংদী সদর উপজেলায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে তাহমিদ তামিম (১৫) নামে এক স্কুলশিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আরএমও মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, তার গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে। এদিন বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তাহমিদ তামিমের বাড়ি সদর উপজেলার চিনিশপুরে। সে নরসিংদী এন কে এম হোমস অ্যান্ড স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ইমন আহমেদ নামে আরও একজন নিহত হয়েছেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও মাহমুদুল কবির বাশার। তিনি জানান, নিহত ইমনের গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে। তার বাড়ি সদর উপজেলার পলাশ থানায়।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরেও সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দার হাট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের মধ্যে তারা গুলিবিদ্ধ হন। তাদের একজন পটিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র মোহাম্মদ ইমাদ। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি